ধূমপানের ফলে নারীদের যা কিছু হতে পারে
ধূমপান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই অত্যন্ত ক্ষতিকর। ধুমপানের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ মারা যাচ্ছে। এমনকি আমাদের বাংলাদেশেও প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজনের মৃত্যুর কারণ ধূমপান।
তাই ধূমপান যে খুবই প্রাণঘাতি, এ কথা স্বীকার করে নিয়ে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলে যত তাড়াতাড়ি ধূমপানকে বিদায় বলবে, ততই মঙ্গল। নারী ও পুরুষের শারীরিক গঠন যেহেতু এক নয়, তাই ধূমপানের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ যে ঠিক একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সে কথাও বলাই বাহুল্য।
এ বিষয়টি চিকিৎসাবিজ্ঞানে প্রমাণিত যে, ধূমপানের এমন অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে, যেগুলো কেবল নারীদের জন্যই প্রযোজ্য। আর সেসব ক্ষতির শিকার হতে একজন নারীর নিজেকেই সরাসরি ধূমপান করতে হবে, তেমনটিও নয়।
তার আশেপাশে অন্য কেউ সিগারেট বা তামাকের ধোঁয়া ছাড়ার ফলে তারও পরোক্ষ ধূমপান হতে পারে, এবং এই পরোক্ষ ধূমপানের মাধ্যমেও সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এবার জেনে নেয়া যাক ধূমপানের ফলে নারীর দেহে যেসব রোগ হতে পারে।
*শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা
ধূমপান ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (সিওপিডি) এর একটি বড় কারণ। এটি বলতে মূলত ফুসফুসের রোগ বোঝায়, যার কারণে ফুসফুসে বায়ু চলাচল বাধাগ্রস্ত হয় এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
সময়ের সাথে সাথে এ রোগের তীব্রতা বাড়তে থাকে, এবং এর কোনো স্থায়ী চিকিৎসাও নেই।
ধূমপানের ফলে খুব কম বয়সেই নারীরা এ রোগের শিকার হতে পারেন। প্রতি বছর এ রোগে পুরুষের তুলনায় নারীর মৃত্যুর পরিমাণ অনেক বেশি।
*প্রজনন স্বাস্থ্য সমস্যা
অধূমপায়ী নারীদের তুলনায় ধূমপায়ী নারীদের প্রজনন বা বিভিন্ন মেয়েলি সমস্যার শিকার হওয়ার হার বেশি। অনেক ধূমপায়ী নারীরই খুব অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়, এবং এ সময় তাদের অনেক যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।
তাছাড়া ধূমপায়ী নারীদের এস্ট্রোজেনের মাত্রা নেমে যায়, যার ফলে তাদের মুড সুইং, ক্লান্তি এবং যোনি শুষ্কতা (ভ্যাজাইনাল ড্রাইনেস) দেখা দিতে পারে।
*হৃদযন্ত্রের সমস্যা
ধূমপানের ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়, যা নারী ও পুরুষ উভয়েরই অকাল মৃত্যুর অন্যতম কারণ। তবে এক্ষেত্রেও পুরুষদের তুলনায় নারীদের আক্রান্ত হওয়ার হারই বেশি।
*ক্যান্সার
কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি নারীদের মধ্যে অনেক বেশি। যেমন: নারীরা অন্য যেকোনো ক্যান্সারের চেয়ে, এমনকি স্তন ক্যান্সারের চেয়েও, ফুসফুসের ক্যান্সারে বেশি মারা যান। তাছাড়া নারীদের সার্ভিক্যাল ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়ার পেছনেও দায়ী ধূমপানই।
*গর্ভধারণের সমস্যা
গর্ভাবস্থায় ধূমপান একজন নারী ও তার সন্তান উভয়ের জন্যই খুবই ক্ষতিকর। গর্ভাবস্থায় যদি কোনো নারী ধূমপান করে, তবে ধূমপান থেকে আগত নিকোটিন সন্তানের ক্ষতি করতে পারে।
*হরমোনজনিত সমস্যা
অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য অনেক নারীই মেনোপজের পর এস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি নিয়ে থাকেন।
এতে ফল পাওয়া যায় ঠিকই, তবে এর অনেক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াও দেখা যায়। বিশেষ করে ধূমপায়ী নারীদের ক্ষেত্রে এটি বিভিন্ন কার্ডিওভাস্কুলার রোগ, যেমন- হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
No comments